৪০ বছর থেকে ১২ মাস রোজা রাখেন এনছান আলী

ধর্ম
বিপুল মিয়া, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
০২:২৪:৪৪পিএম, ১ এপ্রিল, ২০২২
এনছান আলী। ছবি: বিপুল মিয়া

বন্ধুর রোজা রাখা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে ১২মাস রোজা রাখছেন তিনি। প্রথমে পাঁচ বছর রাখার নিয়ত করে রোজা শুরু করলেও পরবর্তীতে তা আর ছাড়তে পারেননি। রোজার প্রতি মহব্বত হার মানিয়েছে শারীরিক অসুস্থতাকেও। মহান আল্লাহকে পাওয়ার আশায় এমনি করেই দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন এনছান আলী (৭৫)।  

তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব এলাকায়। এনছান আলী পেশায় একজন কৃষক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এনছান আলী ১৯৮১ সাল থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি রোজা পালন করে আসছেন। ঈদুল ফিতরের এক দিন ও ঈদুল আজহার চার দিন মিলে মোট পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছরই রোজা রাখেন তিনি। এতে তার শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না বলে জানিয়েছেন তিনি। অসুস্থ অবস্থায়ও তিনি রোজা রাখেন। রোজা রেখে স্বাভাবিকভাবেই সকল কাজকর্ম করে যাচ্ছেন তিনি। 

কর্মজীবনের শুরুতে ইনছান আলী সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করতেন। ১৯৭০ সাল পরবর্তী সময়ে সুপারির ব্যবসার সুবাদে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নাগেশ্বরী উপজেলার মাদাইখাল নাউ খাওয়া ব্রিজ এলাকার সুপারিচাষি সাদর উদ্দিনের সঙ্গে।

সাদর উদ্দিন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। তার সঙ্গে চলাফেরার এক পর্যায়ে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন এনছান আলী। বন্ধু সাদর উদ্দিনের রোজা রাখা দেখে তিনিও রোজা রাখতে শুরু করেন। যা দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে। 

এনছান আলীর নাতি আতাউর রহমান বলেন, জন্মের পর থেকেই নানার রোজা রাখার বিষয়টি জেনে আসছি। রোজা রেখেই তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। অসুস্থ অবস্থায়ও তাকে কোনোদিন রোজা ছাড়তে দেখিনি। 

এনছান আলীর স্ত্রী জেলেখা খাতুন বলেন, আমার স্বামী ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোজা পালন করে আসছেন। প্রথমে তার বন্ধু সাদর উদ্দিন রোজা শুরু করেন। বন্ধুর রোজা রাখা দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমার স্বামীও রোজা পালন শুরু করেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আমরা গরিব মানুষ, ঠিকমতো মাছ-মাংস বা ফলমূল কিনে খেতে পারি না। আমার স্বামী প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারে ভাত কিংবা চিড়া-মুড়ি খান। রোজা রেখে তার কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না। 

এনছান আলী বলেন, ঈদুল ফিতরের একদিন ও ঈদুল আজহার চারদিন মিলে মোট পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছর রোজা পালন করি। রোজা পালনে আমার কোনো সমস্যা কিংবা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করি না। সারাদিন রোজা রাখার পর মানসিক তৃপ্তি পাই। আমার প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ কঠিন কোনো রোগ নেই। 

তিনি আরও বলেন, রোজা পালনের কথা মানুষকে বলা ঠিক নয়। রোজার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালাই আমাকে দেবেন। আমি সারাজীবন রোজা রাখতে চাই। সামনে রমজান মাস। এ মাসে সকল মুসলমানকে রোজা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। 

চর সারডোব ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জেনে আসছি এনছান আলী রোজা পালন করে আসছেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি রোজা করে যাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে সদরের হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, এনছান আলী বৃদ্ধ বয়সেও কৃষি কাজ করে সংসার চালান। দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন সঙ্গে রোজাও রাখেন। তার এ কাজটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমি এ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। সরকারি যেকোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাকে দেওয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, একটানা দীর্ঘদিন রোজা রাখা ইসলামি মতে মাকরুহ। তবে বিরতি দিয়ে রোজা রাখা উত্তম।