স্যালুট বাংলাদেশ, স্যালুট প্রধানমন্ত্রী: এম এ হানিফ

সম্পাদকীয়
এম এ হানিফ
১২:৫৭:১৪পিএম, ২৫ জুন, ২০২২
পদ্মা সেতু উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। বাঙালির ইতিহাসে যুক্ত হলো আরও একটি সাফল্যের পালক। মহান স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাঙালি যে জয়যাত্রায় সূচনা করেছিলো আজ তার আরও একটি মাইলফলক ছুঁলো। অদম্য, অপ্রতিরোধ্য বাঙালির জয়যাত্রায় আজ বিশ্ব অভিভুত। ধানের দেশ, প্রাণের দেশ বাংলাদেশ এখন স্বপ্নের দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এই স্বপ্ন এখন  বাস্তব। কোটি কোটি মানুষের এই স্বপ্ন রূপায়নে নেতৃত্ব দিলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি উদ্বোধন করলেন জাতির বহু আকাঙক্ষার পদ্মা সেতু। এখন থেকে পদ্মার এপাড়ে-ওপাড়ে মানুষে মানুষে রচিত হলো সেতুবন্ধন। তাই স্যালুট বাংলাদেশ, স্যালুট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা, সেই বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট দপ্তরের প্রভাবশালী কর্তা হেনরি কিসিঞ্জার। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সে মন্তব্যের গালে একের পর এক চপেটাঘাত করে চলছে বাংলাদেশ। জবাব দিচ্ছে একের পর এক ইতিহাস গড়ার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে এক সম্ভাববনাময় নাম। উন্নয়নের অফুরান স্রোতধারা বইয়ে চলছে এই জনপদে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ মার্চে ভাষণে বলেছিলেন- ‘বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ তার এই অমরবাণী দেশের প্রতিটি মানুষের আত্মবিশ্বাসে পরিণত করে চলছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। 

এই জনপদ দীর্ঘকাল পরাধীন ছিলো। যুগের পর যুব বিদেশে-বিজাতি বাংলাদেশকে শোষণ করেছে। মানুষকে নিপীড়ন করেছে, বঞ্চিত করেছে। ফলে এই জাতির ইতিহাস এক সময় শোষণ বঞ্চনার ইতিহাসের সমার্থক হয়ে উঠেছিলো। লাখ লাখ বাঙালির প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনে মানুষ প্রমাণ করেছে। এই জাতি আর কারো শোষণ মানবে না, বঞ্চনা মানবে না। তারই ধারাবাহিকতা আজকের বাংলাদেশ। 

আমরা বরাবরই দেখে আসছি বিদেশের কাছে তাঁবেদার সরকারগুলো প্রতিনিয়ত মাথ নত করে জাতিকে বিশ্বে ‘হাত পাতার’ জাতিতে পরিণত করেছিলো। বিশেষ করে বিশ্ব ব্যাংক, আইএমফসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে নানা সময় অতীতের সরকারগুলো মাথা নত করে আসছে। এই ধারা থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে আনার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলছে শেখ হাসিনার সরকার। এটি একটি স্বাধীন জাতির জন্য বড় ঘটনা। সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের সংকল্প নিলে, অর্থায়নে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংসহ অন্যান আন্তর্জাতিক সংস্থা। সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাওয়ার পর নানামুখি ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এই প্রকল্প থেকে তাদের অর্থায়নের সিদ্ধান্ত প্রত্যার করে। যদিও দুনীতি কোথায় কীভাবে হয়েছে আজ পর্যন্ত বিষয়টি পরিস্কার নয়। কিন্তু অদম্য সাহসী মুজিবকন্যা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে ঘোষণা দিলেন্- কারো সাহায্য লাগবে না, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। এই ছিলো শেখ হাসিনার রানৈতিক জীবনে একটি ঐতিহাসিব সিদ্ধান্ত। কোনো কোনো মহল মনে করেছে, হাসিনা সরকার এটি পারবে না। তাদের সকল ধারণা ও ষড়ন্ত্রকে ভুল প্রমাণ করে, শুধু সড়ক নয়, রেল সংযোগসহ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে পুরো জাতির আত্মবিশ্বাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন শেখ হাসিনা। 

সেতু নির্মাণে ব্যয়, তার প্রযুক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ দেশ বিদেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। তারা প্রমত্ত, বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা পদ্মা নদীতে এই সেতু নির্মাণকে ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। 

পদ্ম সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের মানুষকেই নয়, সারা দেশের মানুষকেই উন্নয়নে যুক্ত করবে। বিশেষ করে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, যাতের শ্রমের ও ঘামের মূল্যে জীবন চলে, তাদের জন্য এই সেতু বড় আশির্বাদ। কারণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে আটকে থেকে তাদের সময় বিনামূল্যে নষ্ট হওয়া থেকে বেঁচে যাবে। তারা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন। দেরি করে কাজে আসার জন্য গার্মেন্ট শ্রমিকদের হাজিরা কর্তন বন্ধ হবে। কর্মস্থলে ফেরা খেটে খাওয়া মানুষ স্বস্তি পাবেন। 

এখনও আমাদের কৃষি ও মৎস্য খাতে করপোরেট পুঁজির চেয়ে চাষিদের অংশগ্রহণই প্রধান। তাই তাদের স্বপ্নের শস্য দিয়ে সারা দেশে সররাহের জন্য ফেরি ঘাটে ট্রাকে বসে হায়হুতাশ করতে হবে না। ফলে এই উন্নতির মধ্য দিয়ে একটি উন্নয়নসাম্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ছোট বড় শিল্পগোষ্ঠীর পাশাপাশি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এর দ্বারা লাভবান হবেন। এই কারণেই বলা যায় পদ্মা সেতু সবার সেতু, ধনী-গরিব নির্বিশেষে বাংলাদেশের সেতু। এই সেতু দেশবাসীর আর্থিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করবে। মট্রোরেল, উড়াল সড়ক, মূলত নগরের উন্নয়ন হলেও, পদ্মা সেতু সকল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। আর এটিই হচ্ছে মুক্তিযদ্ধের চেতনা। দেশের সব প্রান্তে সব মানুষ অধিকার ভোগ করবে, এমন চেতনা থেকেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রণ ছিলো মুখ্য। আমরা যদি সকলের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি, তা হলে স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। মুষ্ঠিমেয়, শিল্পপতি, আমলা, ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষাই মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ নয়। আমাদের স্বাধনীতার শিক্ষা হচ্ছে বাংলাদেশ হবে সকলের। আর সেই বাংলাদেশ নির্মাণে এই পদ্মা সেতু অন্যতম মাইলফল। তাই আবারও স্যালুট বাংলাদেশ, স্যালুট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

লেখক: এম এ হানিফ, সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক জনতার ইশতেহার