প্রশাসনিক ক্যাডার হতে চাই মারিয়া

লাইফস্টাইল
মাজহারুল ইসলাম (রুবেল), মাদারীপুর
০২:৩৩:২৩পিএম, ৩০ জুন, ২০২২
ছবি: মাজহারুল ইসলাম (রুবেল)

আমার ইচ্ছে অর্থনীতি বিষয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পূর্ণ করা। কারণ অর্থনীতি হচ্ছে খুবই জীবন ঘনিষ্ঠ একটি বিষয়। স্বল্পপরিমাণ সম্পদ দিয়ে কীভাবে আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদাকে সবচেয়ে এফিশিয়েন্টলি পূরণ করা যায় তাই শেখানো হয় এখানে। এটা শেখায় সিদ্ধান্ত নিতে। আর আমার ভবিষ্যত লক্ষ্য হলো অর্থনীতি বিষয়ে পড়ে প্রশাসন ক্যাডার হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব পালন করা।

যেখানে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বার্থকে বিবেচনা করে প্রতিনিয়ত দ্রুততার সাথে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে। তাছাড়া আমার পরিবারও চায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ভালো ভাবে পড়াশোনা করে প্রশাসনিক ক্যাডার হয়।

এছাড়া বাবাও আমাকে বলেছিলেন, আমি চাই তুমি পড়ালেখা করে একজন প্রশাসনিক প্রধান হও। আমার স্বপ্নও তাই ছিল। বাবার চাওয়া ও আমার স্বপ্ন সেদিন কেবল মনের মাঝেই রেখেছিলাম। সেদিন থেকেই ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে চলছি। তাই স্বপ্ন পুরুন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে (কলা অনুষদ) ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ৮৯ তম হওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভাইয়ার চর গ্রামের মোশাররফ মুন্সীর মেয়ে মারিয়া। গতকাল বুধবার  (২৯ জুন) বিকেলে সরেজমিনে তার সাথে কথা হলে, এসব কথা বলেন তিনি।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, মারিয়াদের বাড়ি একসময় শিবচর উপজেলার সন্ন্যাসীর চর ইউনিয়নে ছিল। ছোট বেলায় তাদের বাড়ি কয়েকবার আড়িয়ল খাঁ নদীতে কেড়ে নেয়। এরপর নিজ নানা বাড়ি মাদবরেরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর এলাকায় চলে আসেন। তিন বোন আর এক ভাইয়ের মধ্য মারিয়া বড়।

এখানে এসে স্থানীয় মাদবরের চর রহিমউদ্দিন মাদবর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে  ২০১৯ সালে এসএসসি পরিক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৪.৮৩ পেয়ে উক্তীর্ন হন। পরে উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিক বিভাগে ভর্তি হন ঢাকাস্ত বীরশ্রেষ্ট নুর মোহাম্মদ রাইফেলস পাবলিক কলেজে। মারিয়ার বাবা ছোট ব্যবসায়ী আর মা গৃহিণী। তারা গ্রামে বসবাস করায় তার ঢাকায় বসবাস করা ছোট চাচা হাজ্জাজ হেলালের বাসায় থেকে তার পড়াশোনা শুরু হয়। সেখানে তাদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরনায় কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।

এসময় মারিয়া  বলেন, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করেছি। একজন ছাত্র গড়ে ৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করলে ভালো ফল করা সম্ভব। করোনার মধ্যই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি গ্রহন করি। পরে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফার্মগেট এলাকার ফোকাস কোচিং সেন্টারের ভর্তি হই।

বাবা-মায়ের পাশাপাশি আমার শিক্ষকদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা। কারণ তারা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। আমার এই ভালো ফল করার পেছনে আমার পরিবার, আমার স্কুল ও কলেজের শিক্ষকদের অবদান আছে।

মারিয়ার মা পলি বেগম জানান,মেয়েটার ভালো ফল করায় ভীষণ খুশি হয়েছি। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ফল ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন আসছে। মেয়েটার জন্য গর্ব হচ্ছে। ওর জন্য দোয়া করি। আপনারাও দোয়া করবেন যাতে মারিয়া ভালো করে ওর স্বপ্ন পুরন করে দেশ ও দশের সেবা করতে পারেন।"

এ বিষয়ে মাদবরের চর রহিমউদ্দিন মাদবর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেব শিকদার বলেন, "আমাদের স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী  মারিয়া। বিদ্যালয়ে থাকাকালীন ওর আচার-আচরণ ও পড়াশুনার মান যথেষ্ট ভালো ছিল। আজ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে এটা গৌরব এবং বড় আনন্দের বিষয়।"