সচল হচ্ছে হাওড় ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

ক্যাম্পাস
মো আমান উল্লাহ, বাকৃবি
০৫:৫৬:০২পিএম, ৬ আগষ্ট, ২০২২

আগামী বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে অবস্থিত হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে। গত ২৮ শে জুলাই মোট ৪ জন শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ৪ বছর পর ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যার মধ্যে কৃষি, মৎস্যবিজ্ঞান, পশুপালন এবং কৃষি অর্থনীতি অনুষদ থেকে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ড. সুবাস চন্দ্র দাস।

জানা যায়, হাওড় ভূমিপুত্র খ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক ড. নিয়াজ পাশা ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ক্যাম্পাসে ২০১৮ সালের ২২ জুলাই রাষ্ট্রপতি ইনস্টিটিউটটির উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের দীর্ঘ ৪ বছর অতিক্রম করলেও পরিচালক পরিবর্তন ব্যতীত ছিল না দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম। তবে শিক্ষক নিয়োগের মধ্য দিয়ে ইনস্টিটিউটটির কার্যক্রম কিছুটা দৃশ্যমান হয়েছে বলে জানা যায়। তবে ইনস্টিটিউটের অবকাঠামোগত কাজ এখনও আটকে আছে কেবল নাম ফলকেই, তৈরি হয়নি কোনো ভবন।

ড. সুবাস চন্দ্র দাস বলেন, আমি কিছু দিন আগেই এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছি। এখানে অনেক কাজ করার আছে। এখানে ইতোমধ্যে ৪ জন কর্মচারী নিযুক্ত আছে যার মধ্যে ২ জন স্থায়ী ও বাকী ২ জন অস্থায়ী। তবে ইনস্টিটিউটটি পরিচালনার জন্য প্রয়োজন আরও লোকবল। শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তিটি আটকে ছিল সেটি বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের সহায়তায় সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আমার সাথে সহযোগী পরিচালক হিসেবে আছেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. উত্তম কুমার সরকার। আমরা চেষ্টা করছি ইনস্টিটিউটটিকে সচল করার।

একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী বছরের ২৩ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করা হবে। এই ইনস্টিটিউট থেকে প্রথমে শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এজন্য সিলেবাস তৈরির কাজ অনেকটাই আগানো হয়েছে। এছাড়া এই ইনস্টিটিউটের একটি অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলমান আছে। দুটি কমিটি এখানে কাজ করছে। পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের মিটিংয়ে এ বিষয়গুলো তোলা হবে। সেখানে বিষয়গুলো পাস হলে আমরা দ্রুত কাজ শুরু করবো।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইনস্টিটিউটটির প্রথম প্রস্তাবনায় বাজেট ছিল ৫০ কোটি টাকা। পরবর্তীতে নতুন প্রস্তাবনায় বাজেট এক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এখনও পাস হয়নি কোনো বাজেট।

তবে ড. সুবাস বলেন, এই ইনস্টিটিউটটির উপকেন্দ্র হিসেবে যে ৪টি জায়গা (কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, বগুড়া) নির্বাচন করে দিয়েছে ইউজিসি, সে সকল জায়গার উপযুক্ততা যাচাই করা হবে। উপযুক্ততা যাচাইয়ের জন্য ইউজিসিতে ৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুতই প্রস্তাবনাটি পাস হবে।

অভিযোগ আছে যে, ইনস্টিটিউটটির শিক্ষক নিয়োগে মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অর্জনকারীকে নিয়োগ না দিয়ে ২২তম স্থান অর্জনকারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্নাতক পর্যায়ে মেধা তালিকায় থাকা প্রথম সারির ৭ শতাংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিষয়ে পরিচালক ড. সুবাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আলাদা বোর্ড আছে। তারা নিয়োগের জন্যে সার্কুলার দেয়। তারপর প্রার্থীরা আবেদন করেন। নিয়োগ বোর্ড বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করে নিয়োগ দেয়। এক্ষেত্রে শুধু তার একাডেমিক ফলাফলকেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়। তবে নিয়োগ একদম স্বচ্ছ হয়েছে বলে দাবি করেন পরিচালক ড. সুবাস। তিনি বলেন, কিছু দিন পরে নিয়োগ প্রাপ্তদের কাজের অগ্রগতি দেখে সবাই বুঝতে পারবে যে নিয়োগ স্বচ্ছ হয়েছে। যারা মেধাবী, যারা হাওড় ও চরের কাজ করতে পারবে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

হাওড়ের বিষয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-‘জমির পরিমাণ দিন দিন কমছে, তাই আমাদের অনাবাদি জমির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’ হাওড় ও চর অঞ্চলকে নিয়ে তাই আমাদের কাজের পরিধিকে বৃদ্ধি করতে চাই। হাওড় ও চর অঞ্চলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে যা যা প্রয়োজন তাই নিয়েই কাজ করবো। এখানে কৃষি, মাৎস্য, পশুপালন, ভেটেরিনারি, কৃষি অর্থনীতি এবং কৃষি প্রকৌশল সকল বিষয়ের সমন্বয় প্রয়োজন আছে। ইনস্টিটিউটটিতে পরবর্তী ভেটেরিনারি এবং কৃষি প্রকৌশলীদের নিয়োগের ব্যবস্থা করবো। কারণ হাওড় ও চরে প্রাণীর স্বাস্থ্য সেবার পাশাপাশি প্রয়োজন কৃষি যান্ত্রিকীকরণেরও।