ডিজিটাল মিটারের ডিজিটাল ভোগান্তিতে গ্রামের সাধারণ মানুষ

বাংলাদেশ
ইয়াছিন মোল্লা, সোনারগাঁও প্রতিনিধি
০২:৫২:২৭পিএম, ২৮ মার্চ, ২০২৪

বর্তমানে গ্রামের সাধারণ মানুষের ভোগান্তির আরেক নাম ডিজিটাল বৈদ্যুতিক মিটার। এমিটার ব্যবহারের একটি নিয়ম হলে মোবাইল ফোনের মতো আগে রিচার্জ করতে হয়। শোনে যতোটা মোবাইল ফোনের মতো সহজ মনে হচ্ছে বাস্তবে তা নয়। কারণ মোবাইল ফোনে যেমন কোনো ফেক্সিলোডের দোকানে টাকা দিলে তা সরাসরি ফোনে চলে আসে ডিজিটাল মিটারে তা নয়। এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে যে পরিমাণ টাকা রিচার্জ করবেন সে পরিমাণ টাকা দিলে দোকানদার আপনাকে ২০ থেকে ২২০ সংখ্যা বিশিষ্ট কিছু সংখ্যা ধরিয়ে দিবে। যেটা বৈদ্যুতিক রেগুলেশনের একটি অংশ এটা আপনাকে মিটারে চেপে তারপর রিচার্জ করে নিতে হবে।

 সাধারণত ২০ সংখ্যা বিশিষ্ট কোনো কোর্ড দিলে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও এর চেয়ে বেশি যখন ১০০ শত এর বেশি সংখ্যা হয় এবং সেই সংখ্যা যখন ২০০ ছাড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে বাজে সমস্যাটা। কারণ এই ২০০ সংখ্যা বিশিষ্ট সংখ্যা চাপতে গিয়ে যখন একটি সংখ্যা ভুল হবে সেক্ষেত্রে আপনার মিটারে রিচার্জ হবে না। এমনকি ৩ বারের অধিক ভুল চাপলে আপনার মিটার বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। 

গ্রামের মানুষ কিছুটা কম শিক্ষিত হওয়ায় তাদের কাছে এরচেয়ে বড় ভোগান্তি হলো এই মিটারে সংখ্যাগুলো চেপে দেওয়ার মানুষের অভাব। যারা কিছুটা বুঝে তারাও মিটারে হাত দিতে চায় না, কারণ সংখ্যা ভুল হলে টাকা আসবে না। আবার কয়েকবার ভুল করলেও সমস্যা। এছাড়াও মিটারটি যদি একটু উপরে হয় তাহলে তো ভোগান্তি আরোও বেশি। এসমস্যা থেকে মুক্তির জন্য অনেক গ্রাহক টাকার বিনিময়ে এনালগ মিটার বসালেও তাতেও আরেক সমস্যা। এর মধ্যে কেউ কেউ রিচার্জ না করার কারণে গোনতে হয়েছে বিশাল অংকের জরিমানা। বর্তমানে  এমন ভোগান্তি শিকার গ্রামের সাধারণ মানুষ। 

এমনি একজন ভোক্তভোগী মনোয়ারা বেগম, দুই ছেলের সংসারে এক ছেলে দেশের বাইরে এবং আরেক ছেলে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। মিটারে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় যখন দোকানে গেলো রিচার্জ করতে তখন দোকানদার রিচার্জ করার পর ২২০ সংখ্যা বিশিষ্ট একটি কোড ধরিয়ে দিলেন। লেখাপড়া না জানায়  এই কোড নিয়ে তিনি মানুষ খোজতে লাগলেন কেউ যদি তার মিটারে টাকাটা ভরে দেয়। কিন্তু কয়েকজনকে বলার পর দু'একজন এগিয়ে আসলেও সংখ্যা দেখে তারাও ফিরে যায়। পরে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তার ছেলে বাসায় ফেরার আগপর্যন্ত। এবং থাকতে হয়েছে অন্ধকারে। অবশেষে রাত ৮ টা তার ছেলে বাসায় আসলে ততক্ষণে এশারের নামাজের সময় হয়ে যায়। কিন্তু করার কিছু নেই নামাজ রেখে তাকে আগে অন্ধকার দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। ২২০ সংখ্যার এই কোডটি তারাহুরো করে ভরতে গিয়ে দুবার ভুল হয়। এমন পরিস্থিতিতে পরবর্তীতে কোডগুলো খাতায় লিখে ভরতে সক্ষম হয়। ডিজিটাল মিটারের কারণে এমন বহু ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় গ্রামের সাধারণ মানুষের। 

এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর এজিএম বলেন, ক্রেডিট বাড়ানোর কারণে প্রথমে ২০০ ডিজিট আসে, তবে এক্ষেত্রে কেউ যদি টাকা ভরতে অপারগ হয় বা ভরতে না জানে সেক্ষেত্রে আমাদের ফোন দিলে আমরা গিয়ে ভরে দিয়ে আসি। কারো বৈদ্যুতিক অফিসের ফোন নম্বর না থাকলে দিয়ে সহযোগীতা করার জন্য তিনি অনুরোধে জানিয়েছে! 

এই মিটার পরিবর্তনের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন মিটার আসলে আমরা এগুলো পরিবর্তন করে দিব ইতোমধ্যে গতবছর কিছু মিটার আনা হয়েছে যেগুলো চাপতে হয় না টাকা ভরলে অটোমেটিক ভাবে রিচার্জ হয়ে যায়। এই মিটার পেতে গ্রাহকদের কোনো আবেদন করতে হবে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না কোনো আবেদন করতে হবে না। কাদের কাছে এমন ডিজিটাল মিটার আছে তা আমরা জানি ক্রমান্বয়ে এগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।